সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটের ৩ জেলায় ১০ হাজার ২১২টি মৎস্য পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে বিভিন্ন জাতের ৩ হাজার ৫১৮ মেট্রিক টন মাছ। যার দাম প্রায় ৬২ কোটি টাকা। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৮২ জন মৎস্যচাষী।
মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষী ও পুকুরের পরিমাণসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। বন্যায় অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য বিভাগ মৎস্যচাষীদের পাশে রয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় মৎস্য চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ জেলায়ই ৮ হাজার ৬’শ ৬৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তবে মৌলভীবাজার জেলার কোন মৎস্য পুকুরের মাছ বানের পানিতে ভেসে যায়নি বলে মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৫টি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৭১ জন মৎস্য চাষী। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরসমূহের মোট আয়তন ২০৮ দশমিক ২৯০ হেক্টর। সিলেট জেলায় বানের পানিতে ২৭৬ দশমিক ৬১০ মেট্রিক টন মাছ ও ২৯ দশমিক ৮৮০ লাখ পোনা ভেসে গেছে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার ৪৬০ টাকা।
হবিগঞ্জ জেলায় ৩৯২টি মৎস্য পুকুর থেকে ২৫৭ দশমিক ৪৭০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। একইভাবে ভেসে গেছে ৫৬ দশমিক ৩৯০ লাখ পোনা। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষী হলেন-৩২৭ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরগুলোর মোট আয়তন ২৬৫ দশমিক ৩৩০ হেক্টর। হবিগঞ্জ জেলার মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৯০০ টাকা।
সুনামগঞ্জ জেলার ৮ হাজার ৬৬৫টি পুকুর থেকে বানের পানিতে ২ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৬২ মেট্রিকটন মাছ ভেসে গেছে। একইভাবে ভেসে গেছে ৪৬৪ দশমিক ৫৬ লাখ পোনা। এতে ৬ হাজার ৪৮৪ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরগুলোর মোট আয়তন ১ হাজার ৫৮৯ দশমিক ৪২ হেক্টর। এ জেলার মোট ক্ষতির পরিমাণ ৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের সংখ্যা হচ্ছে ১০ হাজার ২১২টি। এর ফলে ৭ হাজার ৬৮২ জন মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরগুলোর মোট আয়তন ২ হাজার ৬৩ দশমিক ৪০ হেক্টর। এ সকল পুকুর থেকে মোট ৩ হাজার ৫১৮ মেট্রিক টন মাছ এবং ৪ হাজার ৮১৩ দশমিক ৫৩৬ লাখ পোনামাছ ভেসে গেছে। ৩ জেলায় মৎস্য পুকুরগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৩ লাখ টাকারও বেশি। ভেসে যাওয়া মাছের দাম ৫৭ কোটি টাকারও বেশি বলে সূত্র জানিয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬১ কোটি ৮২ লাখ ৭’শ ১৬ টাকা। পুকুরসমূহে ব্যক্তি উদ্যোগে রুই, কাতলা, কার্পো, ঘাসকার্প, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করেন। মাছ ভেসে যাওয়ায় অনেক মৎস্যচাষী অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আহসান হাসিব খান এ প্রসঙ্গে বলেন, বন্যা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের প্রণোদনা দেয়া হলে মৎস্য বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। তবে প্রণোদনার ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।